গুজব। তিন অক্ষরের এই শব্দটির নতুনভাবে সংজ্ঞায়নের প্রয়োজন পড়ে না। এ শব্দের কি ভয়াবহতা, তা জাতি কিছুদিন পরপর টের পাচ্ছে৷ ধ্বংসলীলায় পরিনত হয় গুজব। এর আসল চেহারা রুপ নেয় তান্ডবে। এত বিবৎসতার পরও কি গুজবের ছোবল থেকে রেহাই মিলছে?
গুজবের আনুষ্ঠানিক শুরুটা যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসেন সাঈদিকে চাঁদে দেখা থেকে। বছর ছয়েক আগের সেই কথা মনে হলে মানুষ এখনও শিউরে ওঠে। বগুড়ায় জামায়াত শিবিরের তান্ডব ও বিভীষিকার দিন আজ। দেশের মানুষের মধ্যে বগুড়ার সেই ভয়াবহ দিনের কথা মনে পড়লে তারা বলে কী শঙ্কিত দিনই না কেটেছে। ভাবা যায় ধর্মান্ধরা কতটা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। ফেসবুকে কৌশলে ফটো এডিট করে চাঁদে সাঈদীকে দেখানো হয়। রাতেই কেউ ঘর থেকে বের হয়ে, কেউ ঘরের ছাদে উঠে চাঁদ দেখা শুরু করে। মোবাইল ফোনগুলো সচল হয়ে ওঠে। একে অপরকে চাঁদে সাঈদীকে দেখতে বলে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মানব মনে হ্যালুসিনেশনে যা কল্পনা করে তাই দেখতে পায়। তারপর একে পুঁজি করে মানুষের মনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে তান্ডব ও বিভীষিকা শুরু হয়।
দুঃখের বিষয়, সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে বগুড়ায় তাণ্ডব চালানোর ৫২ মামলার কোনটিরই বিচার শুরু হয়নি। এমন বিচারহীনতায় বাড়ছ গুজব, ছড়াচ্ছে ভয়াবহতা! যা বিদেশি গণমাধ্যমেও নেতিবাচক শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি ভোলায় শুভর পোস্টকে কেন্দ্র করে ঘটে গেল অশুভ তাণ্ডব। হ্যাক করা ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার গুজবের পরিণতে নিহত হয় বেশ কয়েকজন। আহত হয়েছেন শতাধিক।
চলতি বছরের সবচেয়ে ভয়ানক ছিল ‘ছেলেধরা’ গুজব। কোনো সেতু বা ব্রিজ নির্মাণে মানুষের মাথা দিতে হয়– এমন গুজবে নির্মমভাবে প্রাণ গেল তাসলিমা আক্তার রেনুর। মা হারা হয় ছোট্ট শিশু তুবা।
এই ত কয়েকদিন আগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব ছড়িয়ে কি না লঙ্কাকাণ্ডই হল! হুমড়ি খেয়ে লবন কিনতে বাজারে ছুটে হুজুগে বাঙালি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে। যেখানে থাকে না নির্ভরযোগ্য তথ্যের বালাই। শুধু কারে মুখে শোনেই ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
আশার কথা হল, খবরে এসেছে, এসসব গুজবরোধে বিদ্যমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় নতুন বিধিমালা করতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া সম্প্রচার নীতিমালার আলোকেও গুজব বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শেষ করছি কবি শামসুর রাহমানের ‘পণ্ডশ্রম‘ কবিতা দিয়ে। এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে, চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।
কানের খোঁজে ছুটছি মাঠে, কাটছি সাঁতার বিলে, আকাশ থেকে চিলটাকে আজ ফেলব পেড়ে ঢিলে।
সত্যিই আমাদের কানের পেছনে নিরর্থক ছুটে চলা! কিন্তু কান কানের জায়গায়ই আছে, আমরা শুধু আমাদের জায়গায় নেই।
রুকসানা রহমান