এই ধর্ষক এবার অন্তত থাম্। ধর্ষকরা এখ্খুনি থেমে যা। তোদের অবৈধ ও অমানবিক জৈবিক-চাহিদার থেকে জীবনটা যে অনেক বেশী মূল্যবান। মৃত্যুদন্ডের আইন হয়েছে। দুই-চার মিনিটের ‘সুখ’র চেয়ে জীবনটা বাঁচিয়ে রাখার দিকে নজর ফেরা। মৃত্যুদন্ডেও কী তোদের কলিজাটা একটুকু কাঁপছে না! সারাদেশে ধর্ষণ-বিরোধী, নারী ও শিশু নির্যাতন-বিরোধী আন্দোলন উত্তাল রূপ তো তোরা দেখলি। আন্দোলনকারী ও আন্দোলন সমর্থনকারীর সংখ্যা কিন্তু শতকরা ৯৯.৯ ভাগ। আর ধর্ষক বা নারী-শিশু নির্যাতনকারী তোরা মাত্র ০.১ ভাগ। এই কমসংখ্যক সমাজবিরোধী কুলাঙ্গার দেশটাকে তছনছ করে দিবি, তা হতে পারে না। গ্রেফতার হচ্ছিস। তারপরও ধর্ষণ থামচ্ছিস না কেনো? এর কারণটা কি বল তো? আমার দৃষ্টিতে কারণ একটাই। সামাজিক অবক্ষয়। সামাজিক অবক্ষয় যারা ঠেকাবেন, সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করবেন, তাদেরকে জেগে উঠতে হবে। তবে প্রত্যেককেই অবশ্যই মানুষ হয়ে উঠতে হবে আগে। শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনশৃংখলা সদস্য, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি যেদিকেই তাকাই, দেখি সর্বত্রই ধস নেমেছে। পদস্খলন ঘটেছে। তারপরও যারা এখনও ভালো আছেন, তাদের আড়মোড়া দিয়ে ওঠা উচিত। তা এক্ষুনিই। টাকা আর সম্পদের পেছনে যারা দৌঁড়ায়, তাদেরকে থামাতে হবে প্রথম। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। বর্তমান প্রজন্মের মনন ও মনোজগৎ পরিবর্তনের জন্যে রাষ্ট্রীয়ভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মোটামুটি নেতৃত্ববিহীন এই যে ধর্ষণ-বিরোধী আন্দোলন উপচে উঠতে দেখলাম, এই আন্দোলনকে সরকার বা আইন-শৃংখলা বাহিনীর দিকে নিবদ্ধ না-রেখে সরাসরি ধর্ষকদের ঘাড়ের মধ্যে গিয়ে ঠেকাতে পারলেই আমার মনে হয় পরিত্রাণ। এ জন্যে প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায়, প্রত্যেক ওয়ার্ডে-ইউনিয়নে ধর্ষক-বিরোধী গণসংগঠন বা সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। জনসচেনতা বাড়াতে হবে। সাম্প্রতিককালের আন্দোলন সেদিকেই যাচ্ছিল, মনে করতে পারি। ধর্ষকরা, এবার থামবি কিনা বল। না-থামলে কী করে থামাতে হয় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া এ বাঙালী তা কিন্তু জানে। ক্রসফায়ার ও এনকাউন্টারের সঙ্গে আমাদের পরিচয় বেশি বছরের নয়। ২০০১ সালের পর এটি চালু হয়েছিল। মূলতঃ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের জন্যে ছিল এই দাওয়াই। ক্রসফায়ার মানে বিনা-বিচারে আটককৃতকে গুলি করে হত্যা। একসময় এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সুশীল সমাজ। দেশে আইন আছে, আদালত আছে। তারপরও এ কেমনধারা হত্যাকান্ড? বিশ্ব থেকেও প্রতিবাদ আসতে থাকে। র্যাব বা পুলিশ একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করায়। ‘ধরা-খাওয়া আসামীকে নিয়ে তার গোপন আস্তানায় হানা দিয়ে সেখান থেকে গুলি ছুঁড়লে র্যাব বা পুলিশ পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। গোলাগুলির মাঝখানে পড়ে আসামী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।’ দায়মুক্তির কী মোক্ষম বক্তব্য! অথচ আমরা জানি, গভীর রাতে আসামীকে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে সরাসরি হত্যা করে ফেলা হতো, যার নাম ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টার। বিগত সরকার-সৃষ্ট এই ক্রসফায়ার বর্তমান সরকারও জিইয়ে রেখেছে। বহু মাদক ব্যবসায়ী ও জঙ্গীকে ক্রসফায়ার দেয়া হয়েছে। এতে কিন্তু জনগণের সায়ও ছিল। বর্তমানে নারী ও শিশু ধর্ষণের মাত্রা এতোই বেড়ে গেছে যে, মানুষ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। নারীকে বিবস্ত্র করে উল্লাস করা, তার যৌনাঙ্গ জর্জরিত করা, স্বামীকে বেঁেধ রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ, এসব চলছেই। বাদ যাচ্ছে না দুধের শিশু, এমনকি বৃদ্ধারাও। ধর্ষকরা ধরাও পড়ছে; তারপরও নরপশুদের থাবার বিস্তার কমছে না। আসামীরা বেশীর ভাগেরই রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। জনগণ কিন্তু হাতেনাতে বিচার দেখতে চায়। যেমনি মাদকস¤্রাটদের ক্রসফায়ার হচ্ছিল, তাতে মানুষের সায়ও দিচ্ছিল। বর্তমানের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আবারও ক্রসফায়ারের দেখা পেতে চায় আমজনতা, এমনটাই আমার মনে হয়েছে। তারা বলাবলি করছে, ক্ষমতাধররা যখন ধর্ষক, তখন ক্রসফায়ার কি আবার ফিরে আসবে? আমিও ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে। বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ড কোনোক্রমেই কাম্য নয় সভ্য সমাজে। তবে বিচারের যে সংস্কৃতি দেশে গড়ে উঠেছে অথবা বিচারের ভয়াবহ দীর্ঘসূত্রিতা জনগণকে অতীষ্ঠ করে তুলেছে। যে এমপি সাহেবরা জরাক্লিষ্ট আইনকে পাল্টে দ্রæতগামিতে নেবেন, তারা এখন একাজে নেই। এখন এমপিত্ব মানে তো ব্যবসা। এধারণা যখন তাদের মধ্যে বদ্ধমূল, তখন বলতেই হয়, ক্রসফায়ার ছাড়া উত্তপ্ত রাজপথ থামাতে খুবই কষ্ট পেতে হয় সরকারকে। কয়েকটা ধর্ষককে ফেলে দিলে এবং ধর্ষকদের গডফাদারদের এখনই গ্রেফতার করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, ধর্ষণের প্রবণতা কিছুটা হলেও কববে, এ আমার বিশ্বাস।