“তুমি বেশ বদলে গেছো…পুরনো সৈকতে আর পানসি ভেড়াও না’ কিংবা ‘মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে আমি আর বাইতে পারলাম না’ একসময় নৌকায় চড়ে দূরে কোথাও যাতায়াত কিংবা নতুন বৌকে নৌকায় চড়িয়ে বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে আনার সময় মাঝি–মাল্লা এসব ভাটিয়ালী, মুর্শিদী ও মারিফতি গানে মন কেড়ে নিতো।
সে সময় খাল ও নদীমাতৃক বাংলাদেশের চলাচলের একমাত্র ও অন্যতম মাধ্যম ছিলো পালতোলা পানসি, গয়না, ছুঁইওয়ালা (একমালাই) ও রাজাপুরী নৌকা। এছাড়াও জমিদারদের চলাচলের জন্য ময়ূরপঙ্খী, ধণাঢ্য ব্যক্তিদের জন্য বজরা এবং মালামাল পরিবহনের জন্য সাম্পান, বালার ও বাতনাই নৌকার প্রচলনছিলো। কালের বিবর্তনে এখন নদী, খাল দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে প্রাচীণ ঐতিহ্যের চিরচেনা এসব নৌকা। এখন কালে ভদ্রে কোথাও এসব নৌকার দেখা মেলেনা। তবে এখনও বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের বিলাঞ্চলবাসীর যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের একমাত্র বাহনই হচ্ছে নৌকা।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌকা যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম। এছাড়া পণ্য পরিবহণ ও জেলেদের মাছ ধরার কাজে নৌকার ব্যবহার হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বর্ষাকালে নৌকা প্রচুর ব্যবহার হয়। নৌকার চালককে বলা হয় মাঝি। নৌকার বিভিন্ন অংশ হলো–খোল, পাটা, ছই বা ছাউনী, হাল, দাঁড়, পাল, পালের দড়ি, মাস্তল, নোঙর, গলুই, বৈঠা, লগি ও গুণ। নৌকা প্রধানত কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। মাছ ধরার ডিঙ্গি আকারে ছোট, আবার পণ্য পরিবহণের নৌকা আকারে বেশ বড়। ছই বা ছাউনী তৈরিতে বাঁশ ব্যবহার করা হয়।