তখন আমি বেশ ছোট।চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। আমাদের বাড়ীটা দোতলা, বেশ বড়। মাঝখানে বাড়ী তার চতুর পাশে নানান ধরনের গাছগাছালিতে ভরা। নানান রকমের পাখির বাসা।ডিম ফোটা থেকে বড় হয়ে উড়ে যাওয়া দেখতাম। সময় পেলেই ছুটে যেতাম, কী করছে ওরা !?! বেশ কেটে যেত দিনটা। দোতলা বাড়ীর এক কোনে আমার শোবার ঘর। জানালা গলে আম গাছ। একদিন এক জোড়া নতুন কাক দম্পতি এলো এই গাছে বাসা বানাতে। কিছু দিনের মধ্যেই ওরা বাসা তৈরী করে ফেলল। দুজনের কী ভাব। আমি মনের খেয়ালে যে একটু মোটা ওকে ছেলে আর যে একটু চিকন ওকে মেয়ে বানালাম।একদিন হটাৎ কিছু বোঝার আগেই পাশের বাড়ীর একটা ছেলে এয়ারগান দিয়ে গুলি করল মেয়ে কাকা পাখীটাকে। ঘুরতে ঘুরতে সদর দরজার ওপরে সানসেটে পড়ে গেল। আর ওমনি ছেলে কাক পাখীটা ভীষণ কা কা শব্দ করে পড়ে থাকা পাখীটার কাছে ছুটে গেল। বেশ ছোটাছুটির পর বুঝতে পারল সব শেষ। ছেলেটা তার সঙ্গীনির সামনে বসল।অবাক হওয়ার বিষয় হলো তিন দিন ছেলে কাক পাখীটা এতটুকু নড়লো। মেয়ে কাক পাখীটার সামনে বসে রইল। আমি ঢিল ছুঁড়তাম, খাবার দিতাম এমন কী গায়ে পানির ছুঁড়ে মেরে ছিলাম। কিন্তু কী আশ্চর্য তাকিয়ে দেখতো তবুও এতটুকু নড়লো না। শুধুই চেয়ে থাকা।
আমি আজও ঐ কাক পাখীটার চোখ ভুলতে পরিনি কষ্ট হয়।যখন ওকে খাবার ছুঁড়ে দিচ্ছিলাম, খুব শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। দেখে মনে হল কাঁদছে, কালো মিশমিশে চোখ দুটো টলটল করছে। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠলো। মনে হল, আমায় বলল,” সব শেষ, কী হবে আমার এই একাকী জীবন!!!!!” আজ এত বছর পর বলতে পেরে নিজেকে অনেক টা হাল্কা মনে হলো। ওদের প্রতি অন্যায়টা সবাইকে জানাতে পেড়েছি। সেদিনের সেই ঘটে যাওয়া ঘটনাটা ওদের প্রাপ্র ছিলনা। শুধুই পাশের বাড়ীর ছেলেটার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিঁয়েছিলাম। বলতে পারিনি, “কেন এমন করলে??” অপরাধ বোধ জন্মে ?বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে এক ছুটে দেখতে গেছি। ছেলে কাক পাখীটাও আর বেঁচে নেই। হটাৎ লক্ষ্য করলাম গাল বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।
বহু বছর কেটে গেছে। নিজের ঘর ছেড়ে স্বামীর ঘরে। সেখানে আমার ছোট্ট বারান্দায় অনেক গাছের মেলা। সবুজ আর সবুজ। আজকাল শহরের সব গাছ কেটে শুধুই অট্টালিকা আকাশ ছোঁয়া। প্রায়ই আমার বারান্দার আশ্রয় নেয় টুনটুনি শালিক বুলবুলি কাক চড়ুঁই নিজেদের খেয়াল খুসি মত বাসা বানায়। ডিম ফোটায় ছোট্ট ছানাগুলো বড় হয়ে নিজেদের সঙ্গীনির খোঁজে উড়াল দেয়।