সম্প্রতি দেড় – দুই মাস ধরে আমি নেশার মতােই দৈনিক পত্রিকা গড়ি । আর নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের সংবাদগুলাে কলম দিয়ে দাগিয়ে রাখি । এটা যেনাে আমার একরকম অভ্যেসে পরিণত হয়ে গেছে । মাস দেড়েক – দুই ধরে এই কাজটি করেই চলেছি পাগলের মতােই । এই কাজটি করছি , আর মনের গহীণে পুঞ্জিভূত করছি রাশি রাশি ঘৃণা আর ক্ষোভ । মনকে ধিক্কার দেই এই মনে করে , এই জঘণ্য সমাজে আমাদের বাস ! যে সমাজ নারীকে সম্মান দিতে জানে না । মর্যাদা দিতে জানে না । যে নারীর গর্ভে লালিত , কোলে পালিত হয়ে মানবশিশু একসময় মানুষে পূর্ণতা পায় , সেই নারীই হচ্ছে ধর্ষণে শিকার , হচ্ছে নানাভাবে নির্যাতিত , নিগৃহীত ! এর নামই কী মানব সভ্যতা ? এক দলা থুথু মুখে জমে যায় । সেই থুথু মারতে ইচ্ছে করে এই সমাজ ব্যবস্থার মুখে । সমাজের মুখে পদাঘাত করে সমস্ত কিছুই ভেঙ্গে গুড়িয়ে চুরমার করে দিতে ইচ্ছে করে আমার । এ এক লজ্জাজনক ঘটনা , লজ্জাজনকই বা বলবাে কেনাে , এই নারকীয় ঘটনাটি পশুত্বকেও হার মানিয়েছে । এই ঘটনায় মনে হয় খােদ শয়তানও লজ্জায় মুখ লুকিয়েছে । নরপিশাচ একদল পুরুষের লালসার শিকার হয়ে একটি শিশুর কোলে শােভা পাচ্ছে আরেকটি কন্যাশিশু । শিশুমায়ের কোলের শিশুটি কিন্তু খেলনার পুতুল নয় । এক জলজ্যান্ত মানব শিশু ! ছিঃ ! ছিঃ ! ছিঃ ! ওই নরপিশাচের দলের শীর্ষে রয়েছে শিক্ষক নামের এক পাষন্ড শয়তান ! গত ১৫ ডিসেম্বর ১২ বছরের এক শিশু জন্ম দিয়েছে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান । বাকেরগঞ্জের ভােজমহল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী শিশুটি । দরীদ্র পরিবারের এই সন্তানটিকে মাস নয়েক আগে ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক ধর্ষণ করে । তাকে ধর্ষণ করতে সহায়তা করতাে ডাইনীরূপী একজন সহকারী শিক্ষীকা রেবা খানম । ধিক্কার দিতেও ঘৃণা লাগছে । রেবা খানমকে দিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ডেকে নেয় ওই শিশু শিক্ষার্থীকে । নিজ কক্ষেই শিক্ষকরূপী শয়তটা তার যৌন আকঙ্খ পরিতৃপ্ত করে । ধর্ষণ করে শিশুটিকে । পরবর্তীতে প্রায়ই তাকে ধর্ষণ করতে থাকে সে । বাইরে পাহারায় থাকতাে ওই শিক্ষীকা । কোমলমতি শিশুটি লজ্জা আর ভয়ে কাউকে কিছুই বলতে পারেনি । এদিকে প্রধান শিক্ষকের হুমকী ছিলাে , যদি প্রকাশ করে দেয় , তাহলে তাকে প্রাণ মেরে ফেলা হবে । এক পর্যায়ে শিশুটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে । গর্ভের চার মাসের মাথায় মায়ের চোখে শিশুটির শারীরিক পরিবর্তন ধরা পড়ে । জিজ্ঞাসার এক পর্যায়ে সে সব খুলে বলে । মা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন । মেয়ের মুখে লজ্জাজনক ঘটনাটি শুনে হতবিহ্বল হয়ে ছুটে যান স্কুলে । অন্য শিক্ষকদের জানান বিষয়টি । তারা তাকে সহযােগীতার বিপরীতে হুমকী – ধামকী দিয়ে তাড়িয়ে দেয় । বিষয়টি এলাকায় প্রচার হয়ে যায় । দরিদ্র পরিবারটির প্রতিবেশী আরাে দুই নরপিশাচ এই দূর্বলকার সুযােগ নেয় । ওই অবস্থায় শিশুটি আরাে তাদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় । ঘটনার আদ্যপান্ত উল্লেখ করে অসহায় মা থানায় মামলা করলেও ধর্ষণকারী শিক্ষক , সহযােগিতাকারী অন্য আরেক ধর্ষকের নাম বাদ দিয়ে দেয় পুলিশ । ফলে ন্যায় বিচার না পাওয়ার ক্ষেত্র নিশ্চিত হয় ।সন্তান প্রসবের পর শিশুটি ও তার শিশুসন্তানটি আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ছিলাে । তাদের শেষ পরিণতি কী হয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি । পত্রিকাটির আর একটি সংবাদে আমি ব্যথিত হলাম । পটুয়াখালীর পুলিশ স্বামী বেল্লালের যৌতুকের বলী হলাে এক কলেজ শিক্ষার্থী স্ত্রী । মাত্র ২০ বছর বয়সী স্ত্রী কামরুন্নাহারের মাত্র দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনের যবনিকাপাত ঘটলাে । যৌতুকের দাবীতে স্বামীর নির্মম নির্যাতনে মাত্র দেড় বছরে পৃথিবীর সকল সাধ – আহ্লাদের পরিসমাপ্তি ঘটালাে সে । আত্মহত্যা করে মনের জ্বালা জুড়িয়ে একরাশ ঘৃণা ছুড়ে দিলাে পুরুষশাসিত এই নােংরা সমাজের প্রতি । চট্টগ্রামে মাত্র ২৪ বছরের গৃহবধু রােজিকে হত্যা করে পালিয়ে যায় স্বামী রেজাউল । মাত্র ১০ মাস আগে বিয়ে হয় তাদের । এই কয়েক মাসেই তারও পৃথিবীর সকল সাধ – আহ্লাদ মিটে গােলাে তার সবচেয়ে আস্থার ও নির্ভরশীল আশ্রয়স্থল স্বামী নামের পাষন্ডের হাতে । ফরিদপুরের প্রতিবন্ধী কিশােরী ফাতেমাও বাতিকগ্রস্থ পুরুষের লালসা থেকে রেহাই পায়নি । তাকে শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি নরপিচাশের দল । ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করে বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় নরপশুরা । আসমা আক্তার , একজন গার্মেন্ট কর্মী । হঠাৎ নিখোঁজ । একদিন পর মিললাে তার লাশ । তাকে হত্যা করে কোনাে এক পাষন্ড । ফেলে রেখে যায় এক মাদ্রাসার সন্নিকটে একটি সিমের মাচার নিচে । ফতুল্লাতে ডিসেম্বরের ১১ তারিখে গণধর্ষণে শিকার হলাে ১৯ বছরের এক তরুণী । সে একটি কয়েলের কারখানায় কাজ করতাে । ‘ সােনার আংটি ‘ তুল্য ছেলের হাতে গর্ভধারীণি মাও নিরাপদ নন । যে মা ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে রেখে পৃথিবীর আলাে দেখিয়েছিলেন , সেই মাকে হত্যা করে তারই পাষন্ড ছেলে । ঘটনাটি ৯ ডিসেম্বর সিলেটে । পাষন্ড পুত্র দিপু কুপিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে তার মা প্রেমলতা বাউড়িকে । ধর্ষকের যেনাে কোনাে বাছ – বিচার থাকে না । সুযােগ পেলে দুধের শিশুও তাদের হাত থেকে রেহাই পায় । মাত্র চার বছরের শিশুকে ধর্ষণ করেছে ৫৫ বছর বয়সী এক নরপশু । ঘটনাটি ফরিদপুরের । শিশুটির মা শিশুটিকে তারই ফুফুর কাছে রেখে পাতা কুঁড়াতে যায় বাগানে । প্রতিবেশী আব্দুল হাই সুযােগ পেয়ে শিশুটিকে চকলেটের প্রলােভন দেখায় । দুধের শিশুটি কী জানতাে তাকে মহাসর্বনাশ করবে ওই শয়তানটা ! আর মহাসর্বনাশ সম্পর্কেও তাে তার কোনাে জ্ঞান জন্মেওনি ! চকলেটের লােভে তার ঘরে গেলে ওই পাষন্ড তাকে ধর্ষণ করে । ধিক্কার ওই নরপশু পাষন্ডকে ! ছিঃ ! বাড্ডা থেকে বন্ধুর সাথে টঙ্গীতে দেখা করতে গিয়ে ধর্ষণে শিকার হয় আপন দুই বােন । তারা জয়নাল নামের একজনের জন্য অপেক্ষারতবস্থায় কয়েকজন তাদেরকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে । যারা ধর্ষণ করলাে তাদেরকে তাে আর উম্মাদ বলার সুযােগ নেই । তারা অবশ্যই বাতিকগ্রস্থ পুরুষ । ধর্ষিতা দু ’ বােনের বয়স ১৭ ও ১৮ । ঘটনা ১০ ডিসেম্বরে । ওই দিনই সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদীতে ধর্ষিত হলাে ১৬ বছরের আরেক কিশােরী । তিনজন নরপশু মিলে তাকে ধর্ষণ করে । ঠিক এর পরের দিন আরাে একটি রােমহর্ষক ধর্ষণে শিকার হলাে দুধের বাচ্চা মাত্র চার বছরের আরেক শিশু । তারই এক নিকটাত্মীয় যুবক শিশুটিকে ধর্ষণ করে । যুবকের নাম জীবন । ওই শিশুটিকে প্রলুব্ধ করে একটি নির্জন বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে সে । ওই দিনকার পত্রিকায় পড়লাম আরাে একটি নারী নির্যাতনের ঘটনা । ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদীর । দুই গৃহবধু চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন । একজনের নাম পপি ঢালী । তার বয়স মাত্র ২০ বছর । একঝাক স্বপ্ন ছিলাে তার চোখের তারাই । সেই স্বপ্নের জাল বুননের এক পর্যায়ে স্বামীরূপী পশুটি মােটা অংকের যৌতুক দাবী করতে থাকে । এক পর্যায়ে তাকে নির্মমভাবে প্রহার করে হাসপাতালে পাঠায় ।অপর গৃহবধু দুই সন্তানের জননী সাথী আক্তার । মাদকাসক্ত স্বামীকের মাদকের টাকা যােগান দিতে না পারায় তার ওপর নেমে আসে অমানসিক নির্যাতন । পাষন্ড স্বামী তাকেও পাঠায় হাসপাতালে । স্বামী নামক দেবতার নির্মমতার বলী হয়ে গৃহবধুদ্বয়ের স্থান স্বামীর বুকে হয়নি , হলাে হাসপাতালের বিছানায় । একই দিনে আরাে একটি সংবাদ পড়ে আমি হতবাকই নই , কথিত সভ্যতা নিয়ে আমার মধ্যে হতাশাও জন্মে । যশােরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা শুধুমাত্র নারীদেহ ভােগের জন্য এক নারীর জীবনে এনে দিয়েছে অমানিশার কালাে আঁধার । সুরাইয়া ইসমিনের সাথে প্রেম ছিলাে যশাের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার বিপ্লবের । প্রথমে তাদের পরিচয় মােবাইল ফোনে । পরিচয় থেকে প্রেম । হতেই পারে । কিন্তু এই প্রেমের মধ্যে যে বিষাক্ত হুল ছিলাে তা কি সুরাইয়া কখনাে ভেবেছিলাে । একসময় সেই প্রেমের পরিণতি হওয়ারই কথা বিয়ে । বিয়ে অবশ্য তাদের হয়েছিলাে , মধুচন্দ্রিমার পাঠও শেষ করে তারা । মধুচন্দ্রিমার দিনগুলােতে হােটেলে হােটেলে রাত্রীযাপন করে স্বামীকে বিলিয়ে দিয়েছে তার নারীত্বের সবটুকুই । তখনও নারীটি জানতে পারেনি যে , সে এক প্রতারক নারীখাদকের শিকারে পরিণত হয়েছে । ইবলীসরূপী পুরুষটির মিথ্যা প্রেমের অভিনয়টা সে বুঝতে পারেনি । উভয়ে ফিরে নিজ এলাকায় । স্ত্রী সুরাইয়া তার স্বামীকে বাড়িতে নেয়ার জন্য বললে বিভিন্ন বাহানার আশ্রয় নেয় সে । এক পর্যায়ে সন্দেহ হলে সে কাজীর কাছে যায় । চক্ষু ছানাবাড়া না চড়কগাছ ! কী সর্বনেশে কান্ড ! নকল কাবিননামায় বিয়ের অভিনয়ের সর্বনাশা কাহিনীটি জানতে পারে ওই তরুণী । প্রতারক বিপ্লব নকল কাবিননামায় সাক্ষর করে বিয়ের নামে স্বামী সেজে তার দেহটা ভােগ করেছে ।
রুকসানা রহমান