কিছুদিন আগে এক লোক আমাকে প্রশ্ন করেছিল , ‘ আমি কি পুরুষকে ভয় পাই ? আবার সেই একই প্রশ্ন আমার কাছে আসে , “ আমি কি পুরুষের প্রিয় হতে চাইছি ? ‘ প্রথমেই বলবাে , যে নারী পুরুষের প্রিয় হতে চায় না ,এইসব মানুষ জানেনা। মুখের উপর অপ্রিয় সত্য বলবার সাহসিকতার কারণে অনেক পুরুষই আমাকে নিয়ে ভীত – সন্ত্রস্ত থাকতেন । তবে আমি আজকের মেয়েদের মতাে অমন নির্বোধ , উগ্রবাদী সাহসিকতায় বিশ্বাসী নই , কোনােদিন ছিলাম না । আমি সত্য সেখানেই বলবাে যেখানে তার মূল্য আছে , যাদের সে সত্য উপলব্ধি করার ক্ষমতা না থাকলেও সে সত্যকে অস্বীকার করার কোনাে সুযােগ নেই । পৃথিবীতে যতাে মানুষ । ততাে মতাদর্শ । এই মহান সত্যকে আমি কেবল মর্মে উপলব্ধি করি না , সম্মান করি , অন্তরে ধারণ করি । কিন্তু সেই হাজাৱো | মতাদর্শের ভিত্তিমূলেই আছে একটিমাত্র সত্য । তাই কবিগুরু লিখেছিলেন , ‘ ফ্যাক্টস আর মেনি , বাট টুথ ইজ অনলি ওয়ান ! ‘ একসময় সমগ্র নারীজাতির বসবাস ছিল অন্ধকারের মধ্যে । দিনের আলাে দেখার সুযােগ পর্যন্ত সেদিন তাদের ছিল না । সেই নিয়ম পুরুষই তৈরি করেছিল , সঙ্গে ছিল অজ্ঞানতা , ধর্মান্ধতার ভিত্তিকে আঁকড়ে নির্মিত পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থা । কিন্তু তারও বিশ্লেষণ আছে । সেদিন মানবসভ্যতা ক্রমাগত হামাগুড়ি দেয়া থেকে দাঁড়িয়ে সবেমাত্র গুটি গুটি পায়ে চলতে শুরু করেছিল । এমতাবস্থায় একমাত্র সবলরাই সমাজবিধি গড়ে তােলার দায়িত্ব নেয়াটাই স্বাভাবিক । আর কারা এই সবলেরা ? নারীতাে আজও নিজেকে অবলা বলে দাবি করতেই স্বস্তি পায় । তাহলে স্বাভাবিকভাবে সে দায়িত্ব নিশ্চয়ই পুরুষই নেবে । আর নিজের সুবিধাতাে মানুষ আগে দেখবেই । সে নারী হলেও একই হতাে ( উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে , ‘ মাতৃতান্ত্রিক পরিবার প্রথাও সমাজব্যবস্থা ‘ ) । পুরুষ ও তাই করলাে , ধীরে ধীরে গড়ে তুললাে পুরুষশাসিত সমাজ ( মাতৃতান্ত্রিক পারিবারিক প্রথা ও সমাজব্যবস্থা ভেঙে ) । নারীকে করলাে বন্দি ।
নিজে নারী বলেই নারীজাতির এই অধঃপতনকে আমি মেনে নিতে পারি না । আমি পুরুষকে ভয় পাই কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে যদি বলি যে , সত্যিকার অর্থে পুরুষকে যদি আমার ভয় পেতেই হয় তাতেও আমার কোনাে আপত্তি নেই । পুরুষতাে আর বাঘ নয় যে আমাকে খেয়ে ফেলবে । আমি পুরুষকে সম্মান । করি , তাদের আমি শুধু পুরুষ নয় , মানুষ ভাবি । আমি আগেও বলেছি , যা আমার একান্ত অনুভূতি তা আমি বারবার বলবাে । অল্পবয়সে একসময় আমিও নারীবাদী ছিলাম । কিন্তু জীবনের শিক্ষা , অভিজ্ঞতা , রুচিবােধ , রবীন্দ্রনাথ এইসব আমাকে উচ্চতর চিন্তার জগতে পৌঁছে দিয়েছে । যে নারী বয়সের সঙ্গে নারী – পুরুষ বিভেদীকরণের ধ্যান থেকে মুক্ত হয়নি , সে নারী বিকশিত হয়নি , সময়ের সঙ্গে তার আত্মােপলব্ধি হয়নি । পুরুষকে আমি এখন আর আমার সমকক্ষ ভাবি না । আমি মনে করি তার অবস্থান আমার অবস্থানের চাইতে ভিন্ন । কোথাও সে মহান , আমার চাইতে অনেক বড় , আবার কোথাও আমি তাকে ছাড়িয়ে অনেক দূরে । চাইলেই আমরা একে অন্যের স্থানে আসতে পারি না ।পুরুষের নারীর প্রতি কি কর্তব্য তা নিয়ে অনেক পুরুষই । লিখছেন , কিন্তু আজ আর তা প্রাণ থেকে নয় ! হয়তাে একদিন নারীর জন্য এমন কোনাে পুরুষ উঠে আসবে । আমাদের সমস্যা হলাে আমরা অন্যকে জোর করে শেখাতে চাই আমাদের একের প্রতি অন্যের কি কর্তব্য । পুরাে সমাজই এক জেদাজেদি চক্রে ঘুরছে । তাহলে কিভাবে গড়ে উঠবে নারী । পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্ক ? আরেকটা কথা , নারী দুর্বল , অবলা , এইসব কথা ছাড়তে হবে । সেদিন গেছে । এইসব বলে বলে আর কতাে ? সমস্যা হচ্ছে আধুনিক নারী তার নিজের জায়গা থেকে সরে পুরুষের ভূমিকা নিতে চাইছে , তাই পুরুষ পুরুষের জায়গা থেকে সরে জন্তু জানােয়ারের ভূমিকা নেভাচ্ছে ! কেবল বাইরে থেকে দেখলে হয় না , ভেতরে প্রবেশ করতে হয় । যেকোনাে কারণেই হােক পুরুষের নারীর উপর আধিপত্যকে । আমি খারাপভাবে দেখি না । বরং আমার এই ব্যাপারটা অসাধারণ মনে হয় । হ্যাঁ আমি নারীকে , নারীবাদকে নিয়ে ঠাট্টা করি , আমি নারী বলেই তা করি । মেয়েরা একটা সহানুভূতির থালি নিয়ে চলে , সেটাকে আমি দর্বলতা মনে করি । বারবার নিজেকে দুর্বল উচ্চারণ করাটা কোনাে সবলের লক্ষণ নয় , এতে করুণা বৃদ্ধি হয় মাত্র , কিন্তু তাতে উন্নয়ন হয় না ।