নারী পণ্য! নারীদেহ পণ্য! নারীকে ব্যবসায়ীকভাবে পণ্য বানানো হয়। আর নারী নিজেও পণ্য হয়। অর্থ লোলুপতাই এর মূল কারণ। এক্ষেত্রে প্রথমে অবশ্য নারীকে প্রলুব্ধ করা হয়। পরবর্তিতে মোহ পড়ে যায় সে। তখন আর পিছনে ফিরতে পারে না। শুরু হয় যথেচ্ছ অপব্যাবহার। ওই নারী তখন সমাজের এককোণে নিক্ষিপ্ত হয়। গন্ডিতে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। গন্ডি ছিড়ে আর স্বাভাবিক জীবণে আসতে পারে না। আমি একজন নারীবাদী হয়েও এই পণ্য হওয়ার বিষয়ে আমার আপত্তিটা বেশ শক্ত। আমার ভবানার বিষয়ই হচ্ছে, একজন নারী কেনো পণ্য হবে? ওপরের কথাগুলোর ভাবার্থ এখনো অনেকেই বুঝতে পারেননি, আমি নিশ্চিত। প্রথমে বুঝতে হবে পণ্য কি। যেটার অর্থের বিনিময় থাকে, সেটিই পণ্য। তাহলে নারীর ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ের বিষয়টি প্রযোজ্য হয় কীভাবে? এখন আমি কিছুটা খোলসা করেই বলি। বিশ্বের সবগুলো দেশের নির্মিত সিনেমা-নাটকের দিকে তাকান। বলিউড-টালিউড-হলিউডই হোক আর আমাদের দেশের সিনেমাই হোক। গভীর থেকে একটু ভাবুন। সিনেমাগুলোর কাহিনী যায়ই হোক, নায়িকা বা পার্শ্বচরিত্রের নারীদের শারীরিকভাবে কিছুটা খোলামেলা হতেই হয়। এমনকি প্রয়োজন না থাকলেও নগ্ন বা অর্ধনগ্ন শরীর প্রদর্শন করাটা স্বাভাবিক বিষয়। নারীর নগ্ন বা অর্ধনগ্ন শরীর প্রদর্শন না করলে সিনেমায় দর্শক টানা যায় না। সিনেমাটাও যেনো হয়ে যায় অসম্পূর্ণ। নির্মাতারা মনে করেন, সিনেমার দর্শক মানেই পুরুষ। তাদের চিন্তা-চেতনায় থাকে, নারী কোনো দর্শকই না। শুধুমাত্র পুরুষ দর্শকের কথা বিবেচনায় এনে নির্মাতারা সিনেমা-নাটক বানান। তাই কাহিনীর সাথে সামঞ্জস্য না থাকলেও দর্শকদের যৌন সুরসুরি দিতে নারীদেহ প্রদর্শন করানো হয়। ব্যবসা সফল করতেই এই আয়োজন। পক্ষান্তরে পুরুষ চরিত্রগুলো ঠিকই স্বাভাবিক পোষাকে, তথা ভদ্র পোষাক পরেই অভিনয় করেন। এখানে নারী হলো নির্মাতাদের কাছে পণ্য। আর এই পণ্যটা বিনোদনের খোরাক হিসেবে পুরুষের কাছেই বিপণনযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। পুরুষরাও তা কিনছেন এবং গোগ্রাসে গিলছেন! অল্প কথায় বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। প্রশ্ন আসতে পারে, নারীরা কেনো পণ্যে পরিণত হচ্ছেন। যদি তারা খোলামেলা পোষাক পরতে অথবা নগ্ন হতে রাজি না হতেন, তাহলে সিনেমা-নাটক নির্মাণ কি বন্ধ হয়ে যেতো, দুনিয়া থেকে বিদায় নিতো? অশ্লীলতা ঘিরে ধরায় সিনেমা-নাটক দর্শকপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছে। প্রকৃত দর্শক ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। শালীনতাকে আঁকড়িয়ে ধরলে সিনেমা-নাটকের এই দুর্দিন আসতো না। এটাই বাস্তব, এটাই সত্য। সিনেমা-নাটকে নারী বা নারীদেহ পণ্যে জ্ঞান করা, দোষটা কার? নির্মাতার, নাকি ওই নারীরও। পণ্যের বিজ্ঞাপনে অর্ধনগ্ন নারীদেহ প্রদর্শন যেনো অবশ্যম্ভাবী হয়ে গেছে। বিজ্ঞাপনে নগ্ন-অর্ধনগ্ন বিকিনি পরা নারীর ছবি কি পণ্যের মান বাড়াই, না কি ক্রেতা সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে? এখানেও ওই পণ্যের পাশাপাশি নারী নিজেই পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু কেনো? কেনোই বা নারী নিজেকে পণ্য হিসেবে গণ্য হতে দ্বিধান্বিত হয় না? বলতে দ্বিধা নেই, অর্থ লোলুপতা নারীকে পণ্যে পরিণত করছে। এবার দেহপসারিণী নিয়ে কিছু বলতে হচ্ছে। অর্থের বিনিময়ে দেহ বিক্রিকারী নারীই দেহপসারিণী। দুনিয়ায় এতো এতো কাজ থাকতে এই ঘৃণ্য পেশায় কিছু কিছু নারী বেছে নেয় কেনো? কেউ বলবেন, হয়তো কিছুটা বাধ্য হয়ে। কেউ বলবেন, হয়তো পরিস্থিতিগত কারণে। তবে প্রধান কারণ কিন্তু অর্থ লোলুপতা। ‘বাধ্য হয়ে বা পরিস্থিতিগত কারণ’ আমাদের দেশে অনেকটা প্রযোজ্য হলেও উন্নত দেশের দিকে তাকালে কী তাই মনে হবে? অবশ্যই না। উন্নত দেশে শুধুমাত্র অর্থ আয়ের উৎস্য হিসেবেই এই পেশাকে গ্রহণ করে থাকে অনেকেই। নারী কেনো পণ্য হবে? কেনো নিজেকে পণ্য বানাবে? স্বীকার করতে হয়, নারীই নিজেদেরকে পণ্যে পরিণত করার ক্ষেত্রে নিজেরাই দায়ি। এর থেকে নারীকে বের হয়ে আসতেই হবে। মনে রাখতে হবে, নারী কিন্তু পুরুষের প্রতিপক্ষ নয়। পুরুষের ভোগ্যপণ্যও নয়। সমাজে নারী আর পুরুষ সমসংখ্য। কর্ম-কাজে-মেধাই-প্রজ্ঞায় কোনো অংশে কিন্তু কম নয় নারী। নারী শিক্ষা-দীক্ষায়ও পিছিয়ে নেই। নারীও পুরুষের মতই কর্মক্ষম এবং সমমেধা সম্পন্ন, ক্ষেত্রে বিশেষ তাদের টপকাতেও সক্ষম। যদি নারী নিজেরাই নিজেদেরকে পুরুষের তুলনায় দুর্বল ভাবে, অমেধাবী ভাবে, অক্ষম ভাবে, তাহলে নারীকে পশ্চাৎপদ হয়েই থাকতে হবে অনন্তকাল। সাথে সাথে পুরুষের সমকক্ষ হওয়া বা সমঅধিকারের দাবীটা স্বপ্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।