এক দম্পত্বির চার সন্তান । চারজনই কন্যা । পরপর জন্ম নেয় তারা । এক্ষেত্রে কোথায় যেনাে একটা কিন্তু রয়ে গেছে । ওই দম্পত্তির আচরণে মনে হতাে , তাদের আকাঙ্খার কোথায় যেনাে একটা ঘাটতি রয়ে গেছে । পরপর চারটি কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার পরও তাদের মনের গভীরে যেনাে অপূর্ণতা বিরাজ করতাে । প্রশ্ন হলাে , সেই অপূর্ণতাটাই বা কী ? রহস্যটা কিন্তু আসলে একটা পুত্র সন্তানের আকাঙ্খা । তাদের একটা পুত্র সন্তান চাই – ই । সেই কাঙ্খিত পুত্র সন্তান প্রাপ্তির জন্যই পরপর চার কন্যার আগমন এই ধরণীতে । ওই দম্পতি সর্বদায়ই মনের গহীণে একটা পীড়া অনুভব করে । অনেকটা লজ্জারও । সন্তান জন্মদানের পরপরই এবারাে ছেলে হলাে না , আত্মীয় – পরিজন থেকে শুরু করে প্রতিবেশী পরিচিতজনদের থেকে এই প্রশ্ন তাদের ওই পীড়া বেশ বাড়িয়ে দিতাে । সাথে খােটা – ‘ বংশে বাতি দেয়ার কেউই থাকবে না । অর্থাৎ বংশবিস্তারে যবনিকাপাত ঘটবে । কি কু – লক্ষণীয় ব্যাপার ! বাঙালী সমাজে এধরণের মানসিকতা স্থায়ীভাবে গেড়ে বসে আছে সেই আদিকাল থেকেই । মেয়ে সন্তানরা বড় হয় । একে একে তাদের বিয়েও হয়ে যায় । অপরের ঘরে তারা শােভিত হয় । শূন্য হয়ে পড়ে ওই দম্পত্বির ঘর – সংসার । তারা সংকুচিত হয়ে যান । তাদের বড় মেয়ে এবং তার স্বামী দুজনই সরকারী চাকুরীজীবী । দুজনই আবার প্রায় একই মানের চাকুরী করেন । চাকুরীর সুবাদে বড় মেয়েটার ছিলাে একাকি বাস । শ্বশুরবাড়িতে থাকে না , স্বামীর কাছেও থাকে না । তিনি সন্তানদের নিয়ে তার কর্মস্থলের পাশেই থাকে । চাকুরীর প্রয়ােজনেই তারা দুজন দুই শহরে । একটা মজার বিষয় হলাে , তার স্বামী কিন্তু নিয়মিতই তার বাবা – মায়ের সংসারের খরচ ও তার ভাই – বােনদের লেখাপড়ার খরচ নির্বাহ করে । কিন্তু ওই মেয়েটি দু – একটি উপহার ব্যতীত , কখনই আমার বাবা – মায়ের সংসারের বা তার তিন বােনের লেখাপড়ার কোনাে খরচ বহন করেন না । আয়ের সবই খরচ করেন স্বামীর সংসারে । তিনি ইচ্ছে করলেই বাবা – মাকে সহযােগীতা করতে পারতেন , কারণ তিনি তাে স্বাবলম্বী ছিলেন । কিন্তু অদৃশ্য একটা বাধা তাকে তা করতে দিতাে না । আর এই অদৃশ্য বাধাটাই হলাে পুরুষতান্ত্রীক সমাজ । মেয়েটি বাবা মায়ের সন্তান হলেও এখন তিনি অপরের সম্পদ , স্বামীর । তাই তিনি যা রােজগার করেন তা স্বামীরই প্রাপ্য , বাবা – মায়ের নয় । যদিও বাবা – মাই তাকে লেখাপড়া শিখিয়েই কর্মজীবী হওয়ার পথ করে দিয়েছেন । কন্যা সন্তানদের মানুষ করা , লােখপড়া শেখানােসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন বাবা – মা । বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত তাদেরই তত্ত্বাবধানে থাকে । বিয়ে হয়ে গেলেই তারা অন্যের হয়ে যায় । তাদের আয় – রােজগারের ওপর বাবা – মায়ের ন্যূনতম কোনাে দাবী থাকে না । পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাই তাে শিখিয়েছে । কি অদ্ভুত এই পুরুষশাসিত সমাজ । অন্যান্য কন্যাদের অবস্থাও একই রকম । ওই বাবা – মা কিন্তু থেমে যাননি , তার বাকি তিন কন্যাকেও লেখাপড়া শিখিয়ে স্বাবলম্বী করেছেন । তারাও যথারীতি বড় বােনের দেখানাে পথই অনুসরণ করেছেন । ঈদের দিন সবাই থাকেন বাড়িতে । তাদের বাবা – মা একাকিত্বেই ঈদ উদ্যাপন করেন । সত্যি বলতে কি , বাংলাদেশের বেশিভাগ কর্মজীবী নারীই এভাবেই তাদের বাবা – মায়ের প্রতি দায়িত্বে অবহেলা করতে বাধ্য হন । কারণ একটাই , স্বামীদেবতা ও তার পরিবারের তুষ্টি । এটাই পুরুণতান্ত্রীক সমাজের কু – ফল । আমাদের দেশে সমাজ এখন অনেক বদলে গেছে । বাবা – মায়েরা তাদের কন্যা সন্তানদের লেখাপড়া করাতে দ্বিধাবােধ করেন না । কিন্তু কোথায় যেন তাদের একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে থাকছে । এই দীর্ঘশ্বাস ফেমিনিজম গড়েই উঠেছে নারীদের সম অধিকার প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে । লক্ষ্যণীয় , এখানে আগেই ধরে নেয়া হয়েছে যে ‘ সম ‘ মানেই হল ‘ সঠিক ‘ । নারী – পুরুষ সব জায়গায় সমান সমানভাবে থাকবে , সব জায়গায় সমান সমান অধিকার ভােগ করবে , এটাই ন্যায়সঙ্গত । অনেকেই কটাক্ষ করে বলেন , বাস – ট্রাক চালানাে , গলা ফাটিয়ে হেল্পারি করাসহ ভারী ভারী যত কাজ রয়েছে , তারা কি তা করতে সক্ষম ? কেবল অফিস – আদালতে কর্পোরেট জব ছাড়াও কষ্টদায়ক কর্মেও নারীরা পুরুষের মতােই সক্ষমতা রাখে । নারীরা ক্ষেতে – খামারেও কাজ করছে । কোনাে কন্সট্রাকশন সাইটে কাজের দিন – মজুরের কাজেও পুরুষের সমান কাজ করছে নারীরা । তবে সেখানেও বৈষম্যতার শিকার হয় নারী । সেখানে পুরুষু বেশি নিয়ােগ পাচ্ছে । সমান কাজ করেও নারী মহুরী পাচ্ছে কম । ফেমিনিস্টর দাবী করে – তারাও পুরুষদের সমান সংখ্যায় কাজ করবে এবং একই সময় সমপরিমাণ কাজ করার সক্ষমতা থাকলে কেনাে তারা একই পরিমাণ মজুরি পাবে না ? সারাবিশ্বেই নারীরা বেতন বৈষম্য শিকার । আমেরিকায় করা বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী বেতন – বৈষম্যের পরিমাণ ২৩ পার্সেন্ট । অর্থাৎ প্রতি একজন কর্মজীবী সাধারণ পুরুষ ১শ ‘ ডলার আয় করলে প্রতি একজন কর্মজীবী সাধারণ নারীর আয় ৭৭ ডলার । নারী অধিকারের ব্যাপারগুলাে পুরুষরা যে বােঝে না , তা বললেও ভুল বলা হবে । তারা খুব ভালােই বােঝে , সমাজে নারীরা কি ধরণের ডিক্রিমিনেশনের মুখােমুখি হয়ে থাকে । যােগ্যতা থাকা সত্বেও নারীদের কাজ পেতে নানাবিধ সমস্যার মুখােমুখি হতে হয় । নিঃসন্দেহে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা । এছাড়া মৌলবাদী গােষ্ঠীর নিজস্ব মতবাদের মাধ্যমে নারী অবহেলা বাড়ছে । তারা নানাভাবে প্রমাণ করতে চায় , নারীবাদীরা ধর্মবিরােধী । তাদের চিন্তা – চেতরা ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক । তারা মনে করে , নারীদেরকে তাদের স্বামীদের অধীনেই থাকতে হবে । না থাকাটা ধর্মবিরােধী । যৌনজীবনটা সম্পূর্ণ স্বামীর এখতিয়ার । তারা বলে , তাদের স্বামীর ইচ্ছাতে শয্যায় যেতে হবে । না গেলে সারারাত যে ফেরেস্তারা তাদের উপর অভিশাপ দেবে । তারা বলে , স্বামীর কথা না শুনলে স্বামীদের অধিকার আছে তাদের পেটানাের । তারা ধর্মের দোহায় দিয়ে নারীকে ঘরবন্দি করে রাখতে চায় । তবে ধর্মে কোথাও কী লেখা আছে , নারী ব্যবসা – বাণিজ্য করতে পারবে না , চাকরী – বাকরী করতে পারবে না । তাদের স্থান শুধু চারদেয়ালের মাঝে । শুধুমূত্র রন্ধনশালা আর গৃহস্থলি কাজের মধ্যে তাদের সীমাবদ্ধতা । বিষয়গুলাে ধর্মান্ধগােষ্ঠীর নিজস্ব মতবাদ । ধর্মের নয় । নারীবাদীরা তাদের ন্যায্য অধিকারের কথা বললেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মকে টেনে আনার এই প্রবণতা বহু শতাব্দী আগে থেকেই । ইতিহাস সাক্ষ্য , নারীরা সশরীরে ধর্মযুদ্ধে শরীক হয়েছে , অস্ত্রধারণ করেছে , সরাসরি যুদ্ধ করেছে , যুদ্ধের ময়দানে আহত পুরুষ যােদ্ধাদের সেবা করেছে । নারীবাদের যাত্রা কঠিন ও বেদনার । তবুও এই মতবাদ নারী পুরুষ উভয়কেই লাভবান করে । তাই একটি সমতার পৃথিবী সৃষ্টির জন্য নারীবাদের মতাে একটি আন্দোলনকে সবরকম কুসংস্কার আর ট্যাবু থেকে মুক্ত করা খুব জরুরী । আমাদের কন্যাদের , পর প্রজন্ম নারীদের এই পৃথিবীতে পূর্ণ মানুষের মর্যাদা নিয়ে বাঁচার পথ তৈরি করতে চাইলে আর কোন রাস্তা কিন্তু ভােলা নেই । সুতরাং যেকোন সচেতন নারী , সকল অপবাদ আর শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে একটি সুন্দর সমাজ গড়তে নারীবাদের লড়াই – এ যুক্ত হবেন , সে ব্যপারে আমি নিশ্চিত । সেদিন এই পৃথীবিতে যারা লক্ষ – কোটি বৈষম্যপিড়ীত নারীর সম্মিলিত শক্তি নিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে , পা শক্ত করে দাড়িয়ে অস্বীকার করবে লিঙ্গবৈষম্যের অপ – রাজনীতিকে । কর্মক্ষেত্রে কিছু কাজ রয়েছে যা পুরুষদের জন্য , আবার কিছু কাজ রয়েছে যা নারীদের জন্য , এমন কোনাে বাধাধরা নিয়ম নেই । নারীবাদীরা যতদ্রত নারীদেরকে এ সত্যটাকে বােঝাতে পারবে , নারীদের মঙ্গল ততই দ্রুত বয়ে আনবে ।
লেখিকা : নারীবাদী
॥ রুকসানা রহমান ॥
Thank you for this post. Its very inspiring.super viagra 100mg/60mg pills
Thanks for the article post.Really thank you! Great.
Thanks so much for the post.Really thank you! Great.20ml cialis
call several weeks best place to secure cialis online forum. cialis sample pack Yrbeuz qpvkkz 20mg cialis cialis online reviews
To-do commission any of these bellies below for studios cialis alexandria Onto can also be understood in sustain arrow or
Thanks a lot for the post.Really thank you! Much obliged.https://cheapandbestonline20.com/
Thank you for your blog post.Really thank you! Awesome.cialis daily