বিশ্বব্যাপী ইসলামকে বিতর্কিত ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চলছে । ইসলাম আর সন্ত্রাসকে একই কাতারে নিয়ে আসা হয়েছে । একাকার করে ফেলা হয়েছে জঙ্গীবাদকে ইসলামের সঙ্গে । বর্তমানে বিশ্ব পরিস্থিতি অশান্ত করার মূলেই জঙ্গীবাদ । আর এই জঙ্গী আর ইসলাম একে অপরের সমার্থক বলে বিবেচনাও করা হচ্ছে । মুসলমান মুসলমানকেই হত্যা করবে , এরই নাম জঙ্গীবাদ । তবে মাঝে – মধ্যে অন্য ধর্মের লােক হত্যা করে প্রমাণ করতে হচ্ছে , এই জঙ্গীবাদ সৃষ্টি ও উত্থানে বিশ্বের কোনাে পরাশক্তি বা সম্প্রসারণবাদী শক্তির হাত বা ভূমিকা নেই । কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইসলামকে ? কারা বিশ্বকে অশান্ত রাখতে চাচ্ছে ? জঙ্গী সৃষ্টির মূলে কারা ? বিশ্বব্যাপী কাদের স্বার্থ রক্ষার্থে জঙ্গীরা রােমহর্ষক কর্মকান্ড চালাচ্ছে ? এই প্রশ্নগুলাের উত্তর সচেতন মানুষের সকলেরই জানা । তবে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে সত্য কথা বলেন না অনেকেই । আত্মঘাতী জেনেও বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই জঙ্গী সংগঠনগুলােকে ব্যবহার করা হয় , প্রশ্রয় দেয়া হয় । আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয় । আমাদের দেশে ডজনের কাছাকাছি জঙ্গী সংগঠনের গােপন কর্মকান্ড রয়েছে । তবে সংগঠনগুলাের সদস্য সংখ্যা মনে হয় খুব বেশী নয় । আমাদের দেশে এই স্বল্পসংখ্যক মানুষকে কারা পৃষ্ঠপােষকতা দিচ্ছে ? জান্নাত পাওয়ার প্রলােভনে প্রলুব্ধ করতে কারা তাদের মগজধােলাই করছে ? আন্তর্জাতিক জঙ্গী গােষ্ঠীগুলাের সাথে তাদের যােগাযােগের মাধ্যম হিসেবে কারা দায়িত্বরত ? এই সব পৃষ্ঠপােষকতাকারী , মগজধােলাইকারী ও আন্তর্জাতিক যােগাযােগকারীদের চিহ্নিত করতে পারলেই আমাদের দেশের জঙ্গী সংগঠনগুলাের তৎপরতা বহুলাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে আমি মনে করি । গত্বাধা দোষারােপ নয় , গােয়েন্দা তৎপরতা জোরদারই জরুরী । আপাতদৃষ্টে মনে হয় , আমাদের দেশে জঙ্গী তৎপরতা অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে । কিন্তু কালসাপ সমূলে নির্মূল না করতে পারলে সুযােগ পেলে ছোবল মারবেই , এটা নিশ্চিত । জঙ্গীদের সামনে দুটো মেওয়া – ১ . জঙ্গী রাষ্ট্র কায়েম ও ২ . মরলে ‘ জান্নাত ’ নিশ্চিত ! আমাদের দেশে বেশকিছু ভয়াবহ জঙ্গী হামলা হয়েছে । প্রকাশ্যে বেশকিছু জঙ্গী তৎপরতাও দেখা গেছে । তবে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গী হামলাটি হয় গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে । তাহরিম কাদেরী নামে এক কিশাের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার সঙ্গে অভিযুক্তদের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে বিস্তারিত জানায় । দুজন অভিযুক্তকে সে শনাক্তও করে । উক্ত কিশাের ওই জঙ্গী হামলার অর্থদাতা তানভীর কাদেরীর ছেলে । তার বক্তব্য থেকে জানা যায় , একদিন র্যাশ ওরফে আসলামুল ইসলাম আর বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেট এসে তাদের পল্লবীর বাসার পাশাপাশি অন্যত্র আরাে একটি বাসা নিতে বলে তার বাবাকে । তাদের কথামতাে বসুন্ধরায় বাসা নেয় তার বাবা তানভীর কাদেরী । এর ৮ – ১০ দিন পর বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেট পাঁচজন জঙ্গীকে নিয়ে আসে ওই বাসায় । তাদের সাংগঠনিক নাম সাদ , মামুন , উমর , আলিফ ও শুভ । এর কয়েকদিন পর গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড আহমেদ চৌধুরী তামিম ও গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী মারজান ওই বাসায় আসে । একইদিনে জাহাঙ্গীর , তার স্ত্রী , ছেলে শুভ এবং হৃদয় বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেটের সঙ্গে আসে । জঙ্গীদের কাছে ব্যাগ ছিলাে । ব্যাগে ছিলাে অস্ত্র । তামিম , সাদ , মামুন , ওমর , আলিফ , শুভ বসুন্ধরার ওই বাসাতেই থাকত । তারা বাইরে বের হতাে কম । দরজা লাগিয়ে কথাবার্তা বলত । পাঁচজনের মধ্যে আলিফ ও ওমর অনেক অপারেশন করেছে বলে গল্প করতাে । কুষ্টিয়ার একজন খ্রীস্টান বা হিন্দুকে মেরে রক্তমাখা প্যান্ট খুলে পালিয়ে আসার গল্পও করে । তারা একটি বড় অপারেশন করবে বলে জানায় । যেদিন হলি আর্টিজানে অপারেশন হয় , সেদিন বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার দিকে সাদ , মামুন , উমর , আলিফ ও শুভ কাঁধে একটি করে ব্যাগ নিয়ে বের হয় । তারা বের হওয়ার সময় সকলের সঙ্গে কোলাকুলি করে বলে , ‘ জান্নাতে গিয়ে দেখা হবে ইনশাল্লাহ । ‘ তানভীর কাদেরী তার পরিবারের সদস্যদের সেই সময় বলে , দোয়া করাে যেন ওরা ধরা না পড়ে । তারা ভালাে একটা অপারেশন করবে । পরের দিন সকালে সে জানায় , অনেক ভালাে একটা অপারেশন করে ওরা শহীদ হয়েছে । একথা শুনে তানভীর কাদেরীর পরিবারের সদস্যরা একযােগে বলে উঠে , ‘ আলহামদুলিল্লাহ । ওই রােমহর্ষক ঘটনায় সংশ্লিষ্ট জীবিত জঙ্গীদের আদালত ফাঁসীর রায় দিয়েছে । রায় প্রদানের সময় আদালতের কাঠগড়ায় জঙ্গীদের খােশমেজাজে থাকতে দেখা গেছে । তাদের প্রত্যেকের মুখে ছিলাে চাপা হাসির তরঙ্গ । ছিলাে না কারও মধ্যে কোনাে রকমের অনুশােচনা । রায়ের পর আদালত এলাকায় আসামি জঙ্গী রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যান মাথায় আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের ( ইসলামিক স্টেট ) পতাকার প্রতীক সংবলিত টুপি পরে ছিলাে । জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী নামের আরও এক জঙ্গী পরে ছিলাে কালাে কাপড়ে তৈরি একই রকম টুপি । কেবল আইএস টুপি নয় , রায়ের আগে , পরে এবং রায়ের সময় আদালতকক্ষেও আসামিদের আচরণ ছিল ঔদ্ধত্বপূর্ণ । আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা আসামিরা আল্লাহু আকবর , আল্লাহু আকবর ‘ বলে ওঠে । নারায়ে তাকবীর শ্লোগান দিয়ে বলছিলাে , বিচার হবে হাশরের ময়দানে । এরপর আসামিরা আদালতে উপস্থিত আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলে , আমাদের বিজয় খুব শীঘ্রই । রায় ঘােষণাশেষে আসামি রাজীব গান্ধী বলে , হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়ে তারা কোন অন্যায় করেনি । তারা এজন্য বেহেশতে যাবে । এই দেশে একদিন খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে বলে চিৎকার করে বলতে থাকে সে । রায়ের পর প্রিজনভ্যানে ওঠানাের পর আসামি জঙ্গীরা চিৎকার করে বলতে থাকে – খেলাফত শাসন প্রতিষ্ঠা হবেই । আমরা আল্লাহর সৈনিক ’ , ‘ আল্লাহর সৈনিকদের মৃত্যু হতে পারে না , ২ – ৪ জনকে ফাঁসি দিয়ে জিহাদ দমন করা যাবে না । ‘ ইসলামের প্রধান গ্রন্থ কোরআন আর সমার্থক গ্রন্থসমূহ হলাে ‘ হাদীস ‘ । কোরআন আর হাদীসসমূহের কোথায় কী আছে ‘ খেলাফত রাষ্ট্র ’ গড়তে হলে মানুষ হত্যা করতে হবে ? জঙ্গীবাদ কায়েম করতে হবে ? আর মানুষ মারার সময় নিজেরা মরলেই ‘ শহীদ ’ হবে , এমনকি আত্মঘাতী হলেও । আর এভাবে শহীদ হতে পারলেই নিশ্চিত ‘ জান্নাত ’ ! আমি যতটুকু শুনেছি , মানুষ হত্যা ও আত্মহত্যা মহাপাপ , তার স্থান চিরস্থায়ী জাহান্নাম । এটা ইসলাম বললেও জঙ্গীদের ক্ষেত্রে কী ব্যতিক্রম ? গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামালায় অংশগ্রহণকারী বেশকিছু জঙ্গী নিহত হয়েছে । আদালতের রায়ে আরাে ৭জন জঙ্গীকে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে । অর্থাৎ তারাও মরবে । যেসব জঙ্গী নিহত হয়েছে তারা এবং মৃত্যুদন্ডের মাধ্যমে সম্ভাব্য নিহতদের জন্য জান্নাত নয় , জাহান্নামই হবে তাদের পরবর্তী ঠিকানা ।
রুকসানা রহমান
পবিত্র কুরআন এ লেখা আছে যে, মানুষ হত্যা করা বা আত্নহত্যা মহাপাপ……..
এগুলো যারা করে, অবশ্যই তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে করে, যার পরিমান…তিন পুরুষ বসে বসে খেয়ে যেতে পারবে……….!
আল্লাহর রহমত যদি হয় তাহলে