মঙ্গলবার সকালে সিলেটের সুবিদবাজার এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে একই কায়দায়, যেভাবে গত ৩০ মার্চ ঢাকার বেগুনবাড়িতে অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল।
সিলেট বিমানবন্দর থানার ওসি গৌসুল হোসেন জানান, অনন্ত বিজয় দাশ সকাল ৯টার পর সুবিদবাজারের বনকলাপাড়া এলাকায় তার বাসা থেকে বেরিয়ে শহরের দিকে আসার সময় হামলার মুখে পড়েন।
“চার অস্ত্রধারী তাকে কুপিয়ে আহত করে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাবিবুল্লাহ খান বলেন, “হাসপাতালে আনার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্য হয়েছে। তার মাথায় ও দুই হাতে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের ক্ষত ছিল।”
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রহমত উল্লাহ বলেন, “চারজন মুখোশধারী এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। পুলিশ তাদের সনাক্তে কাজ শুরু করেছে।”
সুবিদবাজারের রবীন্দ্র কুমার দাশ ও পীযূষ রানী দাশের দুই মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে অনন্ত ছিলেন সবার ছোট।সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে মাস্টার্স করার পর সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসাবে যোগ দেন অনন্ত বিজয়।
২০১৩ সালে ঢাকার শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে তরুণ-যুবারা সোচ্চার হলে সিলেটেও গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে তোলা হয়; অনন্ত ছিলেন এর অন্যতম উদ্যোক্তা।
৩১ বছর বয়সী অনন্ত অভিজিতের ব্লগ মুক্তমনায় লেখার পাশাপাশি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগসহ অনলাইনে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ও যুক্তিনির্ভর লেখালেখি করতেন। ২০০৬ সালে তিনি মুক্তমনা র্যাশনালিস্ট অ্যাওয়ার্ড পান।
অনন্তের সম্পাদনায় সিলেট থেকে বিজ্ঞান বিষয়ক ছোটকাগজ ‘যুক্তি’ প্রকাশিত হয়ে আসছিল। ‘সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও বিপ্লব: লিসেঙ্কো অধ্যায়’, ‘জীববিবর্তন সাধারণ পাঠ’, ‘ডারউইন: একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা’ শিরোনামে তিনটি বইও রয়েছে তার।
নিহত হওয়ার আগের দিনও অভিজিৎ ও ওয়াশিকুর হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিজের ফেইসবুক পৃষ্ঠায় একটি পোস্ট দেন অনন্ত বিজয়।
সেখানে তিনি লেখেন, “অভিজিৎ রায়কে যখন খুন করা হয়, অদূরেই পুলিশ দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছিল। খুনিরা নিশ্চিন্তে খুন করে চলে গেল। পরে পুলিশ বলে তাদের নাকি দায়িত্বে অবহেলা ছিল না। বড় জানতে ইচ্ছে করে তাদের দায়িত্বটা আসলে কী!
“ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে যখন খুন করে খুনিরা পালিয়ে যাচ্ছিল তখনও কিন্তু পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু পুলিশের কপাল খারাপ, তারা বলতে পারলে না- এক্ষেত্রেও তাদের কোনো দায়িত্বে অবহেলা ছিল না। কারণ, লাবণ্য নামের তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানবিক মানুষ খুনিদের ধরে ফেলেন। খুনিদের শ্রীঘরে পাঠিয়ে দেন।”আর মঙ্গলবার সকালে হামলার শিকার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তার সর্বশেষ পোস্ট আসে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে ক্ষমতাসীন দলের একজন সাংসদের প্রকাশ্যে চাবুক মারার ইচ্ছা প্রকাশের মন্তব্য নিয়ে।অনন্তের সহপাঠী সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুজ্জামান পাপলু বলেন, “পরিকল্পিতভাবে ব্লগার অনন্তকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগেও ব্লগারদের হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু হত্যাকারীদের সনাক্ত বা বিচারের আওতায় না আনায় বাবাবার এমন ঘটনা ঘটছে।”
অনন্তর বড় বোন পঞ্চত্রপা দাশ জানান, অফিস থেকে ফিরে বেশিরভাগ সময় লেখালেখিতেই ব্যস্ত থাকতেন তার ছোট ভাই। কারও সঙ্গে তার শত্রুতা ছিল বলে তারা শোনেননি।
পাপলু জানান, হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে অনন্তের মাথায় একাধিক আঘাত করে।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু,২৬ ফেব্রুয়ারি লেখক অভিজিৎ রায়, ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও গলার ওপরের অংশ, মুখ ও মাথা ছিল হামলাকারীদের লক্ষ্যবস্তু।
অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলন,অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ ও ব্লগার আসিফ মহীউদ্দীনের ওপরও হামলা হয়েছিল একই কায়দায়। এদের মধ্যে কেবল আসিফই পরনে ভারী কাপড়-চোপড় থাকায় বেঁচে যান।
ওয়াশিকুর হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে দুই মাদ্রাসাছাত্রকে ধরে পুলিশের দেয় জনতা। আর কোনো ঘটনাতেই হামলার স্থলে থাকা কাউকে পুলিশ কখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
ওয়াশিকুর হত্যার তদন্তে থাকা গোয়েন্দারা বলেছিলেন, জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ‘স্লিপার সেলের’ পরিকল্পনাতেই তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে ওই হামলা হয়।
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পরপরই ‘আনসার বাংলা সেভেন’ নামে একটি ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে দায় স্বীকার করে বার্তা দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের দাবি, ওই বার্তা আসলে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের।
হত্যাকাণ্ডের প্রায় দেড় মাস পর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার (একিউআইএস) এক বিবৃতিতে অভিজিৎকে হত্যার দায় স্বীকার করে।
বাংলাদেশে আল কায়েদার কোনো সক্রিয় তৎপরতার খবর পাওয়া না গেলেও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনটিকে অনুসরণ করে বলে পুলিশের তথ্য।
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের নাস্তিক আখ্যায়িত করে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের মার্চে ব্লগারদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। ওই বছর অক্টোবরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে ৮৪ জনের নামের একটি তালিকা পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ, যাতে হেফাজতের তালিকার অনেক ব্লগারের নামই ছিল।
পুলিশের ধারণা, হত্যার উদ্দেশ্যেই ওই তালিকা তৈরি করে আনসারুল্লাহ। পরে মুফতি জসীমকে ব্লগার রাজীব হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ইতোমধ্যে এ মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
আসিফ মহিউদ্দিন, রাজীব হায়দার ও অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে অনন্ত বিজয়ের নামও ছিল ওই তালিকায়।
প্রাসঙ্গিক খবর
- ব্লগার অনন্ত খুনের দায় স্বীকার আল কায়েদার
- অনন্ত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সিলেটে হরতাল আহ্বান
- বইমেলার বাইরে হামলায় লেখক অভিজিৎ নিহত
- ফের অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট খুন, ২ জনকে ধরল জনতা
- খুনগুলো সব একই কায়দায়
- অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কয়েকজন শনাক্ত: ডিবি
- খুন–পালানোর সব কৌশল শিখেই নামেন জিকরুল্লাহ–আরিফুল
নিজের মৃত্যুর একদিন আগেই লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় ও ওয়াশিকুর রহমান বাবুর হত্যাকাণ্ড, বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নারী লাঞ্ছনা ও ছাত্র ইউনিয়নসহ কয়েকটি সংগঠনের কর্মসূচিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে লিখেছিলেন ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ।
আর নিজের উপর হামলার ঠিক কিছুক্ষণ আগে তিনি তাঁর ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে নিয়ে করা স্থানীয় একজন সংসদ সদস্যের একটি মন্তব্যের সমালোচনা করে।
খুন হওয়ার আগে ফেসবুকেএটিই ছিল তার শেষ পোস্ট ।
এরপর থেকে তার টাইম লাইনে একের পর এক পড়ছে পোস্ট যাতে থাকছে শোক, শ্রদ্ধা, সমবেদনা আর ক্ষোভ।
গতকাল তার পোস্টে অনন্ত লিখেছিলেন, “অভিজিৎ রায়কে যখন খুন করা হয়, অদূরেই পুলিশ দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছিল। খুনিরা নিশ্চিন্তে খুন করে চলে গেল। পরে পুলিশ বলে তাদের নাকি দায়িত্বে অবহেলা ছিল না। বড় জানতে ইচ্ছে করে তাদের দায়িত্বটা আসলে কি!ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে যখন খুন করে খুনিরা পালিয়ে যাচ্ছিল তখনও কিন্তু পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু পুলিশের কপাল খারাপ, তারা বলতে পারলো না— এক্ষেত্রেও তাদের কোনো দায়িত্বে অবহেলা ছিল না। কারণ, লাবণ্য নামের তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানবিক মানুষ খুনিদের ধরে ফেলেন। খুনিদের শ্রীঘরে পাঠিয়ে দেন”।
গত ২৬শে মার্চে স্বাধীনতা দিবসে অনন্ত বিজয় লিখেছিলেন, “সুপ্রিয় দেশবাসী, শুভ স্বাধীনতা দিবস! একসেপ্ট রিলিজিয়াস এন্ড কালচারাল মাইনোরিটিস্!”
অনন্ত বিজয়ের বন্ধু ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বিনয় ভদ্র বিবিসিকে বলেন মূলত বিজ্ঞান বিষয় পত্রিকা সম্পাদনা আর ব্যাংকের চাকুরি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন অনন্ত।
ঢাকার শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ওই সময় তিনি সিলেটে ওই আন্দোলনের একজন সংগঠক ছিলেন।নেপালের ভূমিকম্পের পর তার একটি পোস্ট ছিল, “কাঠমোল্লা টাইপের ধার্মিকদের কাছে খুব বেশি আশা করতে নেই। সেটা পাকিস্তানি মোল্লাই হোক, মার্কিন খ্রিস্টান মোল্লাই হোক আর ভারতীয় হিন্দু মোল্লাই হোক! দিনশেষে এরা সবাই এক গোয়ালের!”
২৮শে এপ্রিলের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর তিনি লিখেছেন , “এলোমেলো করে দে মা, লুটেপুটে খাই! ইস! সোনার ছেলেরা বায়না ধরেছে, মা কি আর না-দিয়ে পারে!! বঙ্গে মোরা “নির্বাচন” করলেও আদতে এটা “ইলেকশন” নয়, “সিলেকশন”-ই হলো!…”
গত ৫ই মে তিনি লিখেছেন , “মনে হচ্ছে আল-কায়েদার সাথে আইএসের মাঠ দখলের লড়াই খুব শীঘ্রই। কেন জানি মনে হচ্ছে, এটা বাংলাদেশ ইস্যুতেই ঘটবে।…”
সৌদি সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ওমরাহ ভিসা বন্ধের পর ৮ই মে অনন্ত লিখেছেন , “ ওমরাহ হজে গিয়ে নাকি কিছু বাংলাদেশি আর দেশে ফিরেনি। সৌদি সরকার এজন্য খুব ক্ষিপ্ত। তারা এখন ওমরাহ হজের ভিসা ইস্যু করা বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশিদের জন্য পুরোপুরি। ভাবতেছি : — সৌদি সরকারের এহেন সিদ্ধান্তে কারো ধর্মানুভূতি (বিশেষ করে হজানুভূতি) আহত হয়েছে কী?…”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড: শফিউল ইসলামের প্রসঙ্গে ৯ইমে তার মন্তব্য ছিল, “ক্লাসে ছাত্রীদের নেকাবের (চেহারা ঢাকা) বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শফিউল ইসলাম যদি অবস্থান নিয়েও থাকেন, তাহলে তিনি হুবহু তাই করেছেন যা করেছেন মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি ও বিশ্ব-মুসলিমের শিক্ষাকেন্দ্র আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম ড: তানতাওয়ি।…………”
অন্যদিকে মুক্তমনা ব্লগে তার অধিকাংশ লেখাই বিজ্ঞানভিত্তিক। তবে অভিজিৎ রায় হত্যার পর আটক হওয়া শফিউর রহমান ফারাবী ও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে একটি করে পোস্ট রয়েছে সেখানে।
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলেও তাদের কার্যক্রম তো চলছে। আর বিচার ব্যাবস্তা সে তো মাশাল্লাহ……
Like!! Great article post.Really thank you! Really Cool.
Thank you ever so for you article post.
Are embryonal in the conduct of aspersive and angina. generic tadalafil 20mg cialis buy cialis
ItРІs superscript as a profitable tool but and in. cialis generic cialis cialis generic